আমাদের ইশতেহার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (CUCSU) ২০২৫ নির্বাচনের জন্য সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের নির্বাচনী ইশতেহার।

সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট
ইশতেহার




১. আবাসন সংকট নিরসন ও উন্নয়ন:

বিদ্যমান হলগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও এক্সটেনশন ব্লক বৃদ্ধি এবং নতুন টিনশেড নির্মাণের মাধ্যমে বর্তমান অনাবাসিক শিক্ষার্থী সংখ্যার ন্যূনতম ১০% আসন বৃদ্ধি করা। স্থায়ী সমাধান হিসেবে অধিক শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বহুতল হল নির্মাণ করা। সিট বণ্টন ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত ও দ্রুততর করা এবং সকল তালিকা যৌক্তিকতাসহ প্রকাশ করা।

 

২. শাটলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন:

শাটল ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত বগি সংযোজন করা। প্ল্যাটফর্ম ও বগিগুলো আধুনিকায়ন করা এবং শাটল যাত্রাকে নিরাপদ রাখা। শহর হতে ক্যাম্পাস পর্যন্ত রেলের দ্বিতীয় লাইন স্থাপন সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ গ্রহণ। শাটল ট্র্যাকার অ্যাপ চালু করা।

 

৩. নিরাপদ বাস সার্ভিস:

ক্যাম্পাসের ভেতর ই-কারের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সাশ্রয়ী ভাড়ার ব্যবস্থা করা। বহির্গমনের জন্য শহরের বিভিন্ন প্রান্ত পর্যন্ত শাটল বাস সার্ভিস চালু করা। পার্শ্ববর্তী উপজেলা সমূহের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সুবিধায় বাস সার্ভিস চালু করা ও বিদ্যমান বাসগুলোর মান বৃদ্ধি করা।

 

৪. সুলভ মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ:

স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পুষ্টিকর খাবার মেনু নিশ্চিতকণে ফুড সেল গঠন করা। ফুড সেল কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হোটেল ও বাজারসমূহে সুলভ মূল্য ও মান নির্ধারণে তদারকি করা। ক্যাফেটেরিয়াসমূহের সংস্কার এবং সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করা।

 

৫. সেশনজট নিরসন করা:

প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে একাডেমিক ক্যালেন্ডার কার্যকর করা। পরীক্ষার রুটিন, রেজিস্ট্রেশন এবং ফল প্রকাশ ডিজিটাল সিস্টেমে রূপান্তর করে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে আনা।

 

৬. কটেজ/মেস-এ অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সুবিধা:

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কটেজ ও মেস সমূহে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, পানি এবং অনলাইন সুবিধা নিশ্চিত করা। কটেজসমূহের সংস্কার ও ভাড়া নির্ধারণে কর্তৃপক্ষের তদারকি নিশ্চিত করা।

 

৭. নিয়মিত চাকসু নির্বাচন:

চাকসু নির্বাচনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভক্ত করে নিয়মিত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

 

৮. ফ্যাসিবাদের দোসর-মুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণ:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন ও দোসর-মুক্ত করা। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা, কাঠামো ও সংস্কৃতি চর্চা বিলুপ্ত করা। জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাডেমিক ও ফৌজদারি আইনে শাস্তি নিশ্চিত করা। শহীদ ফরহাদ হোসেন ও শহীদ হৃদয় তরুয়াসহ ফ্যাসিবাদী আমলে চবিতে সংগঠিত সকল হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করা।

 

৯. মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ধারণ:

৪৭, ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০ এবং সর্বশেষ ২৪-এর গণমুক্তির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গঠনে নেতৃত্ব প্রদান।

 

১০. মাতৃত্বকালীন ছুটি ও নারীবান্ধব কমনরুম:

ছাত্রীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা। ফ্যাকাল্টি ও লাইব্রেরিসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থানে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য চাইল্ডকেয়ার সুবিধা ও ব্রেস্টফিডিং কর্নার সম্বলিত কমনরুম নিশ্চিত করা।

 

১১. যৌন হয়রানি ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধ:

নারী শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হয়রানি প্রতিরোধে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলকে শক্তিশালী ও কার্যকর করা। সাইবার সেল গঠন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের কটূক্তি, বুলিং এবং হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।

 

১২. শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ:

শ্রেণীকক্ষের আধুনিকায়ন এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার যথার্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিভাগীয় লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজ করে রিসোর্স বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা।

 

১৩. গবেষণায় উৎসাহ ও বরাদ্দ বৃদ্ধি:

গবেষণায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ল্যাবগুলো সমৃদ্ধকরণ এবং শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে গবেষণা বৃত্তি ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের নিয়ে রিসার্চ ফেস্ট, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্কলারশিপ পেতে সহযোগিতা করা। ছাত্রছাত্রীদের গবেষণা কর্মকে স্বীকৃতি প্রদান ও প্রকাশনার ব্যবস্থা করা।

 

১৪. শিক্ষার্থীবান্ধব লাইব্রেরি:

সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে সকল শিক্ষার্থীর যাতায়াত সহজলভ্য করা এবং ই-লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ করা। একাডেমিক ও প্রফেশনাল প্রস্তুতির সুবিধার্থে শহরে অবস্থিত চারুকলা ক্যাম্পাসে মানসম্মত লাইব্রেরি চালু করা।

 

১৫. মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ:

শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন ও ৩০ শয্যা হাসপাতালে রূপান্তরিত করা। ডাক্তার ও অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় ঔষধাদি সরবরাহ এবং একটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি) স্থাপন করা। জরুরি মেডিকেল হেল্পলাইন চালু করা।

 

১৬. সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবা:

সাশ্রয়ী মূল্যে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণে দেশের স্বনামধন্য বেসরকারি হাসপাতাল এবং ওষুধ সরবরাহকারী একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ( MoU /এমওইউ) স্বাক্ষর করা।

 

১৭. নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ:

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সকল প্রবেশপথ এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা, নিরাপত্তা দপ্তরকে সমৃদ্ধকরণ এবং বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা। রেল গেটে পুলিশ বক্স স্থাপন করা। শিক্ষার্থীদের নিয়ে সিকিউরিটি ফোর্স গঠন করে পার্ট-টাইম চাকরি ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা।

 

১৮. গ্রিন ক্যাম্পাস:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় উচ্ছেদ ও প্লাস্টিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে ক্যাম্পেইন করা এবং বিকল্প সামগ্রী সরবরাহের চেষ্টা করা। জীববৈচিত্র রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সোলার সিস্টেম চালু করা।

 

১৯. নারীবান্ধব ক্যাম্পাস:

হল ও একাডেমিক ভবনগুলোতে মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন প্রোডাক্ট সহজলভ্য করা। ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের সকল কার্যক্রম সহজতর করার লক্ষ্যে ফ্যাকাল্টির মসজিদগুলোতে নারীদের জন্য আলাদা স্থান, আলাদা ওয়াশরুম এবং ক্যান্টিনগুলোতে পর্দা কর্নারের ব্যবস্থা করা। লেডিস ঝুপড়িতে নারীবান্ধব সুপারশপ এবং ফার্মেসির ব্যবস্থা করা হবে।

 

২০. হল ও ফ্যাকাল্টিভিত্তিক সমস্যা সমাধান:

আবাসিক হল ও ফ্যাকাল্টিসমূহের সমস্যাগুলো আলাদাভাবে শনাক্ত করে তা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

 

২১. প্রেয়ার রুম উন্নয়ন:

ক্যাম্পাসে অবস্থানরত সকল ধর্মের প্রেয়ার রুমগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন সাধন করা। রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হয় এমন ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা।

 

২২. সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ:

মননশীল দেশীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করা।

 

২৩. সকল জাতিগোষ্ঠীর অধিকার:

বাংলাদেশি হিসেবে সকল জাতি-ধর্ম-বর্ণ সবার সমান সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করা।

 

২৪. অটোমেশন পদ্ধতি চালুকরণ:

ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, রেজিস্ট্রার ভবনের জটিলতা, ব্যাংকিং সেবায় ভূগান্তি নিরসনে আধুনিক অটোমেশন কার্যকর করা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেন অনলাইনে নিজেদের ফলাফল সহজেই দেখতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা।

 

২৫. উচ্চশিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট:

শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টের লক্ষ্যে ফ্রি কর্মশালার আয়োজন করা। নিয়মিত ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের মাধ্যমে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা। এছাড়াও ক্যারিয়ার সামিট, উদ্যোক্তা মেলা ও জব ফেয়ারের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তর করা।

 

২৬. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও শিক্ষাবৃত্তি:

শারীরিক প্রতিবন্ধী, আর্থিকভাবে অসচ্ছল এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি চালু করা। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণ, পরীক্ষাপদ্ধতি ও ভোটাধিকার প্রয়োগ সহজলভ্য করা এবং আবাসিক হলে নিরাপদ সংরক্ষিত কক্ষ নিশ্চিত করা।

 

২৭. টিএসসি ও সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম নির্মাণ:

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে টিএসসি ও সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম নির্মাণের চেষ্টা করা।

 

২৮. শরীরচর্চার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি:

শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চার জন্য হলগুলোতে একটি নির্দিষ্ট কক্ষ নির্ধারণ এবং পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ ক্যাম্পাসের সকল মাঠগুলোর সংস্কার নিশ্চিত করা।

 

২৯. লিগ্যাল এইড সেল গঠন:

শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট যেকোনো সমস্যা সমাধানে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে লিগ্যাল এইড সেল গঠন করা।

 

৩০. অফিসিয়াল ই-মেইলের সহজলভ্যতা:

সব শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ই-মেইল ১ম বর্ষে প্রদান করা। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজে প্রিমিয়াম অ্যাপের ব্যবহার এবং অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা।

 

৩১. অ্যালামনাইদের সাথে সমন্বয়:

অ্যালামনাইদের মাঝে সমন্বয় সাধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ছাত্রকল্যাণমূলক কাজে তাঁদের ভূমিকা নিশ্চিত করা।

 

৩২. মেন্টাল হেলথ কাউন্সিল:

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি কার্যকর মেন্টাল হেলথ কাউন্সিল গঠন করা। এ কাউন্সিলে অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট নিয়োগ দিয়ে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

 

৩৩. অন ক্যাম্পাস জব:

উন্নত বিশ্বের আদলে ক্যাম্পাস জব চালু করা। সবগুলো আবাসিক হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, চাকসু, পরিবহন দপ্তর, নিরাপত্তা দপ্তর, হাসপাতাল, বিভিন্ন বিভাগ এবং ইন্সটিটিউটে যোগ্য এবং অপেক্ষাকৃত আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য চাকুরির ব্যবস্থা করা।